রাজধানীতে ঢাকা ওয়াসার সংযোগ লাইন রয়েছে প্রায় ৫ লাখ। এর মধ্যে ৬৫ হাজার লাইন রয়েছে অবৈধ। এ অবৈধ পানির সংযোগের মাধ্যমে প্রতিবছর প্রায় ১০০ কোটি টাকার পানি চুরি হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে এ কাজে সহযোগিতা করছে ওয়াসার কিছু অসাধু পরিদর্শক ও মিটার রিডাররা। ফলে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছন্ন করার জন্য ওয়াসা কিছু দিন পর পর অভিযান পরিচালনা করেও এর সংখ্যা কমাতে পারছে না। ওয়াসার একটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ওয়াসা জানায়, এ অবৈধ সংযোগের ফলে গত কয়েক বছরে ওয়াসার সিস্টেমলসের পরিমাণ বেড়ে গেছে প্রায় তিনগুণ। এতে ওয়াসার লাভের চেয়ে লোকসান বেশি গুনতে হচ্ছে। ওয়াসার অবৈধ সংযোগের মধ্যে বেশির ভাগ সংযোগ রয়েছে শিল্প-কারখানা, গার্মেন্টস, হোটেল ও রেস্তোরাঁয়। এছাড়া কিছু বাসাবাড়িতেই সংযোগ রয়েছে। মাঝে মধ্যে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ অভিযান পরিচালনা করে এ সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করলেও আবারো ওয়াসার কিছু অসাধু পরিদর্শক ও মিটার রিডারের যোগসাজশে সংযোগ নেয়া হচ্ছে। প্রতিমাসে এ অবৈধ সংযোগ থেকে তারা মাসোহারা নিচ্ছে। আর সংযোগভেদে ২০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা নেয়া হয়। এ টাকার ভাগ ওয়াসার উচ্চ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তার পকেটেও যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মগবাজারের কিছু অংশ, মালিবাগ, উত্তর শাহজাহানপুর, রামপুরা, বনশ্রী, বাড্ডাসহ আরো কিছু এলাকার পানি ব্যবহারের প্রায় উপযোগী নয়। এসব এলাকার পানিতে ময়লা এতো বেশি পরিমাণ যে এক বালতি পানির নিচে এক ইঞ্চি পরিমাণ ময়লা জমে যায়। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, ওয়াসার অভিজ্ঞ মিস্ত্রি ছাড়া অন্য মিস্ত্রি দিয়ে অবৈধ সংযোগ নিতে গিয়ে ওয়াসার পাইপলাইনের মারাত্মক ক্ষতি করা হচ্ছে। এতে পাইপে লিকেজ হয়ে একদিকে পানির অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে পাইপলাইনের ভেতর পয়ঃনিষ্কাশনের মলমূত্র ঢুকে পড়ছে। আবার কোনো কোনো এলাকায় পাইপের লিকেজ দিয়ে পানি অপচয় হচ্ছে। এছাড়া পাইপের লিকেজ বেয়ে সড়কের ওপর স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াসার এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ওয়াসার কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী অবৈধ সংযোগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ বিষয়ে ওয়াসার কাছে একাধিকবার অভিযোগ আসলে অভিযান পরিচালনা করে এর সত্যতা পাওয়া যায়। অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার পর ওইসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে আবারো অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়। এতে প্রতিবছর ওয়াসার প্রায় এক থেকে দেড়’শ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসীম এ খান এ কথা স্বীকার করে বলেন, নগরীর দু’একটি এলাকায় পানির কিছু সমস্যা আছে। তাই বলে গোটা ঢাকায় পানির সমস্যা হচ্ছে এ কথা ঠিক নয়। তিনি জানান, রাজধানীতে ওয়াসার বৈধ সংযোগের পাশাপাশি অবৈধ সংযোগও রয়েছে অনেক। এ বিষয়ে আমরা প্রায় সময় অভিযান পরিচালনা করে থাকি। অভিযানে এ ধরনের অবৈধ সংযোগ ধরা পড়লে জরিমানাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ অবৈধ সংযোগে সাহায্যকারী কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চিহ্নিত করে ইতিমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ধরনের কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।