গাজীপুর সিটি নির্বাচনে স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এমএ মান্নানের পক্ষ নিলেও নানা নাটকীয়তার পর দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ অবস্থান নিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লাহর পক্ষে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে তড়িঘড়ি করে তার মালিকানাধীন গুলশানে ইউনিয়ন ব্যাংক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আজমত উল্লাহর পক্ষে তার দলের আনুষ্ঠানিক সমর্থনের কথা জানান দেন এরশাদ। দলের কোনো স্তরের নেতাদের সঙ্গে আলাপ- আলোচনা ছাড়াই হঠাৎ তিনি এ ঘোষণা দেয়ায় বিস্মিত ও হতবাক হয়েছেন বলে দাবি করেন দলের নেতারা।
এ সংবাদ সম্মেলনের পরপরই গাজীপুরের স্থানীয় নেতাকর্মীরা সাফ জানিয়ে দেন দলের চেয়ারম্যান আজমত উল্লাহকে সমর্থন দিলেও আমরা ভোট দেবো মান্নানকে। কারণ শুরু থেকেই আমরা তার সঙ্গে আছি, শেষ পর্যন্ত থাকবো। বিজয়ী হয়েই ঘরে ফিরবো ইনশাআল্লাহ।
এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্রিগেডিয়ার (অব.) কাজী মাহমুদ হাসান বলেন, আমরা স্যারের (এরশাদের) নির্দেশ মানি না। আমরা ভালো করেই জানি স্যারকে (এরশাদ) সরকার ভয় দেখিয়ে আজমত উল্লাহকে সমর্থন দিতে বাধ্য করেছে। কিন্তু গাজীপুরের জাতীয় পার্টির একজন নেতাকর্মী-সমর্থকও আজমত উল্লাহর পক্ষে কাজ করবে না। এতদিন যার পক্ষে কাজ করেছে, শেষ পর্যন্ত তার পক্ষেই কাজ করবে। ভোটও তাকেই দেবে।
গাজীপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম জানান, সংবাদ সম্মেলন করে স্যার (এরশাদ) যা বলেছেন- তা স্যারের মনের কথা না। স্যারকে চাপ দিয়ে এ সম্মেলন করানো হয়েছে। তাই আমরা স্যারের এ সিদ্ধান্ত মানি না। আমরা আজমত উল্লাহকে ভোট দেবো না, তার পক্ষে মাঠেও নামবো না। মান্নানকেই ভোট দেবে জাপার নেতাকর্মীরা।
প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক এমপি গোলাম হাবিব দুলাল বলেন, জাতীয় পার্টি যেহেতু কাগজে-কলমে মহাজোটে রয়েছে, তাই হয়তো স্যার (এরশাদ) আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে আনুষ্ঠানিক সমর্থন দিয়েছেন।
এরশাদের এমন ঘোষণায় মাঠপর্যায়ে নেতাকর্মীদের প্রতিক্রিয়া কি- এমন প্রশ্নের জবাবে দুলাল বলেন, জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের প্রতিক্রিয়া কি- তা আমার চেয়ে দেশের সাধারণ জনগণই ভালো জানেন। আর গাজীপুরে কোন মেয়র প্রার্থীকে জাপা নেতাকর্মীরা ভোট দেবে- এতদিনে তাও সবার জানা হয়ে গেছে। তাই নতুন করে এ নিয়ে বলার কিছু নেই।
স্যারের (এরশাদ) আজমতের পক্ষে এ ঘোষণায় কোনো কাজ হবে না বলে মত দেন এ সাবেক সংসদ সদস্য।
এদিকে এরশাদের মুখপাত্র কাজী ফিরোজ রশিদ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, এ নিয়ে আমার প্রতিক্রিয়া নেই। শুধু বলতে চাই, গাজীপুর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা এতদিন যার জন্য কাজ করেছে, যাকে সমর্থন দিয়ে এসেছে- আমি তার পক্ষে।
তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, যারা স্যারকে (এরশাদ) ভয় দেখিয়ে তড়িঘড়ি করে আজমত উল্লাহর পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছেন- তাদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে দেখুন তারা কী বলেন।
অপরদিকে জাপা প্রেসিডিয়াম এবং এরশাদের উপদেষ্টা পরিষদের নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েকদিন ধরেই সরকারের পক্ষ থেকে আজমত উল্লাহকে আনুষ্ঠানিক সমর্থন দেয়ার জন্য এরশাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল। সরকারের পাশাপাশি জিএম কাদের, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুও এরশাদকে নানাভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেন। তারা এরশাদকে বুঝিয়েছেন- আজমত উল্লাহকে সমর্থন না দিলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা অসন্তুষ্ট হবেন। তাদের সন্তুষ্ট করার জন্য আজমত উল্লাহকে সমর্থন দেয়া জরুরি। এমনকি বিভিন্নভাবে এরশাদকে জেলে নেয়ার ভয়ও দেখানো হয়েছে বলে জানায় ওই সূত্রগুলো।
তাদের মতে, মূলত জেলে যাওয়ার ভয়েই কোনো নেতার সঙ্গে আলাপ না করেই আজমত উল্লাহর পক্ষে সমর্থনের এ ঘোষণা দিয়েছেন এরশাদ।
এ সংবাদ সম্মেলনে এরশাদের পাশে জাপার মধ্যে আওয়ামীপন্থী হিসেবে পরিচিত ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, তিনদিন আগে আজমত উল্লাহকে দোয়া করেছিলেন এরশাদ। পরের দিন তার কাছে মান্নান সাহেব গেলে তাকেও তিনি দোয়া করেন। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীকে দোয়া করলেও কারো প্রতি কোনো সমর্থন দেননি তিনি। তবে কোনো কোনো সংবাদ মাধ্যমে মান্নানকে দোয়ার সঙ্গে সমর্থন দেয়ার খবর প্রকাশিত হয়।