সাভার রানা প্লাজা ভবন ধসে আটকেপড়া গার্মেন্টকর্মী রেশমার উদ্ধার সম্পর্কে গত ৩০শে জুন বৃটিশ ট্যাবলয়েড ‘সানডে মিরর’ পত্রিকায়
প্রকাশিত একটি বিভ্রান্তিমূলক প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে সোমবার অপরিণামদর্শী ও অমানবিকভাবে মনগড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করে- যা দায়িত্বশীল সংবাদ মাধ্যমের নিকট হতে অনাকাঙিক্ষত ও অনভিপ্রেত বলে উল্লেখ করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। গতকাল পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- এসব বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদনের প্রতিবাদে একটি বিস্তারিত বিবৃতি সংশ্লিষ্ট সকলের জ্ঞাতার্থে বলা হয়- গত ২৪শে এপ্রিল সাভারের ৯ তলা বিশিষ্ট রানা প্লাজা আকস্মিকভাবে ধসে পড়ে। দুর্ঘটনার পরপরই সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি’র নেতৃত্বে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষিত সেনাসদস্যগণ এবং ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় জনগণ ও স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতায় ধসে পড়া ভবনে আটকা পড়া মানুষজনকে উদ্ধারে আত্মনিয়োগ করেন। উদ্ধারকারীরা আটকা পড়া জীবিতদেরকে উদ্ধারের ব্যাপারে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেন। উক্ত ভবনে কয়েকটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির ইউনিট থাকায় সেখানে আটকে পড়াদের বেশির ভাগ গার্মেন্টকর্মী ছিলেন। এই উদ্ধার কাজ দুর্ঘটনার দিন হতে (২৪শে এপ্রিল থেকে) ১৩ই মে নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিচালনা করা হয়েছিল। উদ্ধার স্থলে দেশী-বিদেশী মিডিয়ার অবাধ বিচরণ ছিল। কোন কোন টিভি মিডিয়া উদ্ধার তৎপরতা সরাসরি সম্প্রচার করেছিল। উদ্ধার কাজ চলাকালে ২৮শে এপ্রিল আরেকটি হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছিল। উদ্ধারকর্মীরা নিজের জীবনের নিরাপত্তা উপেক্ষা করে শাহিনা নামের আটকেপড়া একজন গার্মেন্টকর্মীকে উদ্ধারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার শেষ মুহূর্তে হঠাৎ করে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এর ফলে তাকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এই উদ্ধার কাজে নিবেদিত উদ্ধার কর্মী ইজাজ কায়কোবাদ মারাত্মকভাবে আহত হয়ে কয়েকদিন পর মৃত্যুবরণ করেন। ঝুঁকি সত্ত্বেও আরও অনেককে যেন উদ্ধার করা যায়- এই আশায় ২৮শে রাত ১২ টার দিকে উদ্ধার কাজের ২য় পর্যায় অর্থাৎ যান্ত্রিক উদ্ধার কাজ শুরু করা হয়েছিল। এখানে একটি কথা বলা প্রয়োজন যে, ভিতরে কতজন আটকা পড়ে আছে এর সঠিক পরিসংখ্যান কারও কাছেই ছিল না। তবে উদ্ধার কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে ৯ম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং আইএসপিআর সময়ে সময়ে মিডিয়াকে অবহিত করে যাচ্ছিল। এছাড়াও দুর্ঘটনাস্থলে ৯ম পদাতিক ডিভিশন কর্তৃক স্থাপিত অস্থায়ী কন্ট্রোল রুম সব সময়ের জন্য খোলা রাখা হয়েছিল, যেখান থেকে মিডিয়া কর্মীসহ যে কেউ উদ্ধার কাজের আপডেট যে কোন সময় সংগ্রহ করতে পারতো। উল্লেখ্য, উদ্ধার কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার সুবিধার্থে সরকার কর্তৃক নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসিকে প্রধান করে সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটির ওপর সকল আটকেপড়া ব্যক্তিকে উদ্ধার এবং ধ্বংসস্তূপ অপসারণের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল। এখানে সরকারের স্পষ্ট নির্দেশ ছিল যে, জীবিত ও মৃত প্রত্যেককে যথাযথ সতর্কতা ও যত্নের সঙ্গে উদ্ধার করতে হবে এবং উদ্ধার কাজ সম্পূর্ণরূপে সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত উদ্ধার কাজ অবিরতভাবে চলতে থাকবে। উদ্ধারকারীরা এক মুহূর্তের জন্যও উদ্ধার কাজ বন্ধ না রেখে অব্যাহতভাবে উদ্ধার চালিয়ে গিয়েছিলেন এবং মিডিয়াও উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে রাত-দিন প্রতিটি মুহূর্ত জেগে থেকে উদ্ধার দৃশ্য এবং সংবাদ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল। এর মধ্যে ১০ই মে এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার ১৭ দিন পর উদ্ধারকর্মীরা একজন জীবিত ব্যক্তির সন্ধান পান। প্রশিক্ষিত সেনা সদস্য ও ফায়ার সার্ভিস অত্যন্ত সতর্কতায় ধসেপড়া ভবন হতে একজন মহিলাকে উদ্ধার করেন। তার নাম রেশমা। তিনি একজন গার্মেন্ট কর্মী। মিডিয়াসহ সকলের উপস্থিতিতে তাকে বিকাল প্রায় সাড়ে ৪ টায় উদ্ধার করা হয়। রেশমাকে উদ্ধারের পরপরই চিকিৎসার জন্য সাভার সিএমএইচ-এ নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাকে সুস্থ করে তোলার জন্য সেনাবাহিনীর চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসা দেয়া হয়। মিডিয়ার অনুরোধের প্রেক্ষিতে ডাক্তারদের সম্মতি সাপেক্ষে ১৩ই মে বিকালে রেশমাকে মিডিয়ার সামনে নিয়ে আসা হয়। যদিও, তখনও তার ট্রমা কাটেনি, তৎসত্ত্বেও প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী সাংবাদিকরা তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। রেশমা সাংবাদিকদের সামনে ভবনে আটকেপড়ার দুঃসহ স্মৃতিচারণ করেছিলেন, যা দেশী- বিদেশী (বিবিসি, সিএনএন, আল জাজিরা ইত্যাদি) মিডিয়ায় তার বিস্তারিত বক্তব্য প্রচারিত/প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর রেশমা সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে সিএমএইচ থেকে ৬ই জুন রিলিজ দেয়া হয়। হাসপাতাল থেকে বিদায় নেয়ার মুহূর্তে তিনি দেশী-বিদেশী সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন যা সঠিকভাবে প্রচার/প্রকাশ করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, চিকিৎসাধীন অবস্থায় রেশমাকে বিভিন্ন সংস্থা চাকরির অফার দেয়। এর মধ্যে হোটেল ওয়েস্টিনের অফার রেশমা গ্রহণ করেন। সাভার সিএমএইচ থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি হোটেল ওয়েস্টিনে যোগ দেন। উদ্ধার ঘটনার প্রায় দীর্ঘ ৫০ দিন পর ‘সানডে মিরর’ নামে বৃটিশ ট্যাবলয়েড পত্রিকা রেশমা উদ্ধার সংক্রান্ত যে বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন করে, তা উদ্ধারকারীদের মনে চরম আঘাত দিয়েছে। তাদের ত্যাগ, সততা ও মানবতা বোধ প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পরিবেশনের ফলে রেশমার মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। কেননা, তার ট্রমা এখনও সম্পূর্ণরূপে দূরীভূত হয়ে যায়নি। সানডে মিররের প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে দেশীয় কিছু গণমাধ্যমও অনুরূপ কাজ করে যাচ্ছে। এ সব বিভ্রান্তিমূলক প্রতিবেদন প্রকাশের পথ পরিহার করে ১৩ই মে ও ৬ই জুন রেশমার সংবাদ/বিবৃতিগুলো সংবাদ মাধ্যমে পুনরায় প্রচার/প্রকাশের ব্যবস্থা নেয়া বাঞ্ছনীয়। তাদের এ পদক্ষেপ অবশ্যই সকলের সাধুবাদ অর্জন করবে। আইএসপিআর’র পরিচালকের পক্ষে সহকারী পরিচালক মো. নূর ইসলাম গতকাল এ বিজ্ঞপ্তি পাঠান।
↧
রেশমার উদ্ধার প্রতিবেদন মনগড়া- আইএসপিআর
↧