মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে দেশবাসী ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছে। শুক্রবার সকালে কোটি কোটি মুসলমান সারাদেশে অসংখ্য স্থানে ঈদগাহ এবং মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। এরপর বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিষ্টিমুখ আর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা এবং নানা উৎসবের মধ্য দিয়ে দিনটি কাটিয়েছেন তারা।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এডভোকেট, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া ঈদ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
সকালে ঈদের নামাজ শেষে রাষ্ট্রপতি তার বাসভবন বঙ্গভবনে দেশের বিশিষ্ট নাগরীক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবনে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপরসন বেগম খালেদা জিয়া রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (চীন মৌত্রি সম্মেলন কেন্দ্র) দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে মুসলিম সম্প্রদায়ের বৃহৎ উৎসব ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সম্মেলন কেন্দ্র এ সময় দীর্ঘ লাইন দিয়ে সাধারণ মানুষ বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঈদ আনন্দ বিনিময় করেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তার বনানীর কার্যালয়ে দলের নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
মুসলিম সম্প্রদায়ের বৃহৎ এ উৎসবে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও মিশেল ওবামা, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ, পররাষ্ট্রদপ্তরের সিনিয়র মন্ত্রী ব্যারোনেস ওয়ার্সী এবং ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক ছায়ামন্ত্রী রুশানারা আলী এমপিসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ।
দেশের প্রধান ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় ঈদগাহে। সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত এই জামাতে রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেকে নামাজ আদায় করেছেন।
এর আগে সকাল ৭টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি এক ঘণ্টা পর পর এখানে আরো ৫টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এর বাইরে দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। মাওলানা ফরীদউদ্দীন মাসউদের ইমামতিতে সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত এই জামাতে অংশ নেন কয়েক লাখ মুসল্লি।
বিপুল সংখ্যক মুসল্লির জন্য সঙ্কেত হিসেবে সেখানে নামাজ শুরুর ৫ মিনিট আগে ৩টি, ৩ মিনিট আগে ২টি ও ১ মিনিট আগে ১টি শটগানের গুলি ফোটানো হয়।
এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পাড়া-মহল্লায় অসংখ্য ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এসব জামাতেও দেখা গেছে মুসল্লিদের উপচেপড়া ভিড়।
এদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল, কারাগার, শিশু পরিবার, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, সেফ হোমস, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়।
বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশনগুলো ঈদের দিন থেকে শুরু করে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়েজন করেছে। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের উদ্যোগে প্রদর্শন করা হয় প্রামাণ্য চলচ্চিত্র।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য বিনা টিকিটে খুলে দেয়া হয় ঢাকা সিটি করপোরেশনের (উত্তর ও দক্ষিণ) আওতাধীন সব শিশুপার্কগুলো। ঢাকা জাদুঘরও বিনা টিকিটে খুলে দেয়া হয় তাদের জন্য।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের উদ্যোগে মহানগরীতে আয়োজন করা হয় প্রীতি ফুটবল ম্যাচের। বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয় শিশুদের ঈদ পুনর্মিলনি অনুষ্ঠান।
জাতীয় এ কর্মসূচির সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্থানীয় পর্যায়ে সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দেশব্যাপী ঈদের অনুষ্ঠান পালিত হয়।